জন্ডিস কমানোর ঘরোয়া উপায়

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার সেরা ১০ টি উপায় জন্ডিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনি কি জানতে আগ্রহী। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আজকে আর্টিকেলে আমরা জন্ডিস কমানোর বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

জন্ডিস-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়
সাধারণত জন্ডিস শুধু একটি রোগ নয়। এটি লিভারের অসুস্থতার এক বিশেষ সতর্ক সংকেত। এক্ষেত্রে জন্ডিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল জুড়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃজন্ডিস কমানোর ঘরোয়া উপায়

জন্ডিস কমানোর ঘরোয়া উপায়

সাধারণত জন্ডিস একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। যা আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে থাকলে দেখা দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এই রোগ থেকে দ্রুত সেরে ওঠার জন্য ঔষধের পাশাপাশি ঘরোয়া উপায় গুলো অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। জন্ডিস কমানোর জন্য আপনার যে বিষয়টির উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো সঠিক খাদ্যভাস বজায় রাখা এবং প্রাকৃতিক উপাদান গুলো সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করা।

আরো পড়ুনঃ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

জন্ডিস কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্যভাস পরিবর্তন করা। যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান এবং ডাবের পানি শরীরের টক্সিন দূর করতে সহায়তা করে। এবং গাজর ও বিটের রস লিভারের কার্যক্ষমতা অধিকারের বৃদ্ধি করে। হলুদ এবং আদার রস লিভারের প্রদাহ কমাতেও বিশেষ উপকারী। এছাড়াও সঠিক খাদ্য তালিকা অবলম্বন করার জন্য তিলের খাবার এড়িয়ে চলার এবং সহজে পচে যায় এ ধরনের খাবার না খাওয়াই উপকারী। 

জন্ডিসের জন্য বিশেষ করে মধু এবং লেবুর রস অত্যন্ত প্রতিরোধক সহায়তা করে। তবে বিশেষ করে মনে রাখতে হবে জন্ডিস গুরুতর পর্যায়ে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা ঘরোয়া উপায় শুধু প্রাথমিক সহায়তা দিতে পারে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শই সেরা সমাধান হবে জন্ডিসের জন্য।

জন্ডিস কি

জন্ডি শুধুমাত্র একটি রোগ নয়।, বরং এটি লিভার বা রক্তের সমস্যার কারণে বিশেষভাবে দেখা দিয়ে থাকে। জন্ডিস মানুষের শরীরে তখনই হয় যখন রক্তে বিলিরুবিন নামক পদার্থের মাত্রা অধিকারে বেড়ে যায়। আর এই বিলিরুবিন হল এমন একটি রঞ্জিত পদার্থের নাম। যা লোহিত রক্ত কণিকার ভাঙ্গনের ফলে মানুষের শরীরে সৃষ্টি হয়। এটি মূলত লিভার দ্বারা প্রক্রিয়াজাত হয় এবং প্ত্তৃর মাধ্যমে মানুষের শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

জন্ডিসের প্রাথমিক লক্ষণসমূহ সমূহ কি কি বিস্তারিত জানুন

জন্ডিসের প্রাথমিক লক্ষণ গুলো রোগের অবস্থা বুঝার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী মাধ্যম। বিশেষ করে তিনটি লক্ষণ বেশি চোখে পড়ে। যেই লক্ষণগুলো আমাদের লিভার সমস্যার দিকে নির্দেশ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো ভালোভাবে বুঝলে দ্রুত সময়ে চিকিৎসা কে পরামর্শ নেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জন্ডিসের প্রাথমিক কয়েকটি লক্ষণ নিচে আলোচনা করা হল।

জন্ডিস-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়াঃ সাধারণত জন্ডিস হলে মানুষের ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। এটি মূলত শরীরে রক্তের বিলুরুবিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণেই ঘটে থাকে। মূলত ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া জন্ডিসের সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ। সাধারণত জন্ডিস হলে প্রথমেই মানুষের চোখের সাদা অংশে হলুদ ভাব দেখা যায়। এবং তা পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হওয়াঃ মানুষের শরীরের রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণে বেলুরুবিন এর মাত্রা অধিক হারে বেড়ে গেলে বা শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জমা হলে মূলত প্রস্রাবের রং গারো হলুদ এবং বাদামী হয়ে যায়। এটি জন্ডিসের প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝার একটি কার্যকরী উপায়। এক্ষেত্রে যদি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রস্রাবের রং বেশি গারো মনে হয় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাহলেই মূলত এটি জন্ডিসের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে কিছুটা এড়িয়ে চলা যায়।

দুর্বলতা ও ক্লান্তিঃ মূলত জন্ডিস হলে আমাদের লিভারের কার্যক্ষমতা অনেকটাই কমে যায়। যার ফলে দেখা যায় শরীরে বিষাক্ত পদার্থ অতিরিক্ত পরিমাণে জমে যায়। আর এটিই আমাদের শরীরকে দুর্বল এবং ক্লান্ত করে তুলে। এক্ষেত্রে আপনি যদি স্বাভাবিক যেকোনো ধরনের কাজকর্মে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্লান্ত অনুভব করেন এবং এর সঙ্গে অন্য কোন লক্ষণ থাকে। তাহলেই মূলত এটি জন্ডিসের সম্ভাব্য প্রাথমিক ইঙ্গিত দিয়ে থাকে।

জন্ডিস কিভাবে মানুষের লিভার কে ক্ষতিগ্রস্ত করে

মূলত জন্ডিস হলো মানুষের লিভারের বেলুরুবিন প্রসেসিং বাধাগ্রস্থ করে এমন একটি রোগের প্রক্রিয়া। যেই প্রক্রিয়াটি মানব শরীরে রক্তের মাত্রা বাড়ায়। সাধারণত লিভারের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এটি বিলুরুবিন ভাঙতে পারে না। বেলুরুবিন হল মানুষের রক্তে লাল কণিকা ভেঙে যাওয়ার ফলে তৈরি হওয়া একটি উপাদান। মূলত যদি কোন মানুষের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি জন্ডিস দেখা দেয় তাহলে তা পরবর্তীতে লিভারের কর্যক্ষমতা হার্শ করার অন্যতম কারণ হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ মিল্ক শেক খাওয়ার উপকারিতা এবং নিয়ম জানুন

সাধারণত অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন বা ভাইরাল সংক্রমণ জন্ডিসের ঝুঁকি অতিরিক্ত হারে বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে জন্ডিস হওয়ার পর সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করলে এটি লিভারের স্থায়ী ক্ষতি এবং মৃত্যুর মতো ভয়াবহ কারণ হতে পারে। তাই যদি কোন মানুষের শরীরে জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তার দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া বিশেষ প্রয়োজন।

জন্ডিসে চোখ হলুদ কেন হয়

মূলত মানুষের শরীরে জন্ডিস এর লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর চোখের সাদা অংশ হলুদ হওয়ার প্রধান কারণ হলো রক্তের মধ্যে বিলিরুবিন নামক উপাদানের মাত্রা অধিকারে বৃদ্ধি পাওয়া। কেননা লিভার যদি বিলিরুবিন সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করতে না পারে তাহলে এটিতে রক্ত জমে যায়। আর এই রক্ত জমা হওয়ার কারণেই চোখের সাদা অংশে হলুদ রঙের আবরণ তৈরি হয়। এছাড়াও লিভারের অসুস্থতা বাবাইল ডাক ব্লক হলেও বিলিরুবিনের নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয় যা রক্ত টিস্যুতে মাত্রা বাড়িয়ে চোখের মধ্যে হলুদ আবরণ তৈরি করতে পারে।

নবজাতকের জন্ডিসের কারণ

সাধারণত নবজাতকের জন্ডিসের মূল কারণ বিলিরুবিনের মাত্রা বৃদ্ধি থেকে হয়ে থাকে। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিকভাবে এবং জন্মের পর প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই দেখা দেয়। এর মূলত কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হল।

জন্ডিস-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়

অপরিপক্ক লিভারঃ সাধারণত যখন একজন নবজাতক জন্ম হয় ওই সময়ে তার লিভার সম্পূর্ণ পরিপক্ক হয় না। আর এই সম্পূর্ণ পরিপক্ক না হওয়ার কারণেই তার বিলুরুবিন সঠিকভাবে প্রসেস করতে পারেনা। যার ফলে দেখা যায় তার স্বাভাবিকভাবে কিছু জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়।

রক্তের গ্রুপের অমিলঃ অনেক সময়ই দেখা যায় মায়ের এবং নবজাতক শিশুর রক্তের গ্রুপের অমিল হয়ে থাকে। যা কিছু কিছু সময় শিশুর রক্তকণিকা ধ্বংস হয়ে বিলুরুবিন বেড়ে যায়। যার ফলেই দেখা যায় নবজাতকের বেশ কিছু জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয়।

সংক্রমণ বা থাইরয়েড সমস্যাঃ নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো থাইরয়েড সমস্যা। বিশেষ করে কোন নবজাতক শিশুর যদি সংক্রমণ বা হরমোন জনিত সমস্যা থাকে তাহলেও তার শরীরে জন্ডিসের কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

জন্ডিস রোগীদের খাদ্য তালিকা সমূহ

সাধারণত জন্ডিস রোগীদের জন্য সহজপাচ্য , কম তেল যুক্ত এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল পানি পান করাও বিশেষ উপকারী। বিশেষ ক্ষেত্রে জন্ডিসের রোগীদের জন্য পেঁপে, লাউ, শসা, ডাল, ভাত, ও সিদ্ধ খাবার বেশি উপকারী। এছাড়াও জন্ডিসের রোগীদের জন্য ভাজাপোড়া, মসলাদার খাবার এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলা বিশেষ জরুরি। এক্ষেত্রে জন্ডিসের থেকে সুস্থতার জন্য সঠিক খাদ্য বাস এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জীবন যাপন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জন্ডিসের সময় কি কি ব্যায়াম করা সঠিক হবে

সাধারণত একজন মানুষের যখন জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয় বা জন্ডিস হয়। তখন তার লিভার অনেক দুর্বল থাকে। তাই ওই সময়ে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলে বিশ্রামে বেশি মনোযোগ দেওয়া জরুরী। তবে জন্ডিসের সময় রক্ত সঞ্চালন উন্নতি করতে হালকা কার্যকলাপ করা যায় যেমন হালকা হাটা, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা ইত্যাদি। তবে এই সময়ে দৌড়ানো বা ঝাপানো এ ধরনের ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

লেখকের শেষ কথা

জন্ডিস একটি গুরুতর শারীরিক অবস্থা। যা লিভারের কার্যক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত হয়ে থাকে। এটি চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণযোগ্য হলেও সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই জন্ডিস এড়িয়ে চলার জন্য আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রেখে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে শরীরে যেকোনো সমস্যা বা জন্ডিসের মত রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

আরো পড়ুনঃ মধুময় বাদাম খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা

আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জন্ডিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। এরকম আরো স্বাস্থ্য জনিত যে কোন তথ্য পেতে আমাদের যমুনা আইটির সাথেই থাকুন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

যমুনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ttps://https://www.jomunait24.com//p/contact.html