দোয়া কবুলের দশটি পরীক্ষিত আমল সমূহ

দোয়া  মুসলমানদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আর এই দোয়া  করার মাধ্যমেই মানুষের জীবনের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তার বান্দার সমস্ত কথা শুনেন এবং কবুল করেন।

দোয়াই একমাত্র মাধ্যম যার দ্বারা সরাসরি আল্লাহর সন্তুষ্টি  অর্জন করা যায় আর এই দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কুরআন ও হাদিসের নির্দিষ্ট শর্ত এবং পন্থা রয়েছে আজকের এই ব্লগে এমন দশটি নির্দিষ্ট শর্ত নিয়ে আলোচনা করব যা কুরআন ও হাদিসের আলোকে পরীক্ষিত এবং প্রমাণিত। 

পেজ সূচিপত্রঃ দোয়া কবুলের দশটি পরীক্ষিত আমল সমূহ 

হালাল উপার্জন

দোয়া কবুলের দশটি পরীক্ষিত আমলের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আমলটি তা হল হালাল উপার্জন
করা। এ বিষয়ে মুসলিম শরীফে উল্লেখ করা আছে যে ব্যক্তির খাদ্য পোশাক এবং জীবন যাপন হারাম উপার্জন থেকে আসে তাহলে ওই ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তা'আলা  কিভাবে কবুল করেন{ সহীহ মুসলিম-১০১৫} এজন্যই দোয়া কবুল হওয়ার   জন্য আমাদেরকে সবসময় হালাল উপার্জন করতে হবে এবং হালাল খাদ্য  গ্রহণ করতে হবে।

আরো পড়ুন ইনভিট ছাড়া অনলাইনে টাকা ইনকাম করার ১০ টি উপায়

সব সময় আল্লাহ তা'আলা কোন সময় হারাম ভক্ষণকারীর দোয়া কবুল করেন না এজন্যই আমাদেরকে সব সময় হারাম থেকে দূরে থাকতে হবে। হারাম থেকে দূরে থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করলে তিনি অবশ্যই আমাদের দোয়া কবুল করবেন। এই বিষয়ে রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন তোমরা হালাল খাও আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তোমাদের দোয়া কবুল করবেন { মুসলিম-১৬৯৫}

খালেস নিয়ত করা

দোয়া কবুলের পরিক্ষিত আমলসমূহের প্রথম শর্তই হল খালেস নিয়ত করে আল্লাহর নিকট দোয়া করা দোয়া করার পূর্বে অবশ্যই নিয়ত সঠিক থাকতে হবে। এবং সম্পূর্ণ ঈমান আকীদার সাথে দোয়া করতে হবে আল্লাহ তা'আলা কুরআনে কারীমে বলেন তোমরা শুধু আল্লাহর কাছেই দোয়া করো তার জন্যই দিনকে খালেস করো  {সূরা গাফির -১৪}এ বিষয়গুলো অবলম্বন করলে আল্লাহ তা'আলা নিশ্চয়ই তার দোয়া কবুল করবেন।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা

দোয়া কবুলের পরীক্ষিত আমল সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি হল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা । এবং দোয়া কবুলের একটি বিশেষ উপায় ।ইসলামের ভিত্তি হল পাঁচটি তার মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা অন্যতম। আমরা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার পর আল্লাহ তাআলার নিকট খালেস নিয়ত করে ঈমানের সাথে দোয়া করি তাহলে আল্লাহ তা'আলা নিশ্চয়ই আমাদের দোয়া কবুল করবেন

এটি কুরআনে বর্ণিত নামাজ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে বর্ণিত করেন নিশ্চয়ই সালাত মুমিনদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফরজ করা হয়েছে  {সূরা নিসা- ১০৩} তাই অবশ্যই দোয়া কবুলের জন্য আমাদের পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করা উচিত।

প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার সময় দোয়া 

 দোয়া কবুলের পরীক্ষিত আমলের মধ্যেএকটি হলো মসজিদে প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার সময় দোয়া করা । মুসলিমদের ইবাদতের জন্য সবচেয়ে পবিত্র জায়গা হল মসজিদ এবং এই  মসজিদে প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার সময়ও একটি দোয়া রয়েছে যে দোয়া আল্লাহ তায়ালার নিকট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।মসজিদে প্রবেশের আগে ও পরে দোয়া করলে সেই দোয়া আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকে বিশেষ রহমত এনে দেয়,। তাই আমাদের এই সময় দোয়া করা উচিত । রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রসঙ্গে ''তোমরা  যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তাআলার নিকট রহমত প্রার্থনা করবে'' {মুসলিম- ৭৭১}

তওবা ও ইস্তেগফার পরা

দোয়া কবুলের পরীক্ষিত আমল সমূহের মধ্যে একটি হল তাওবা ও ইস্তেগফার পড়া মুসলিমদের দোয়া কবুল না হওয়ার সবচাইতে বড় কারণ হলো গুনাহ করা বা আমলনামা খারাপ হওয়া এই আমলনামা খারাপ হওয়ার কারণেই মানুষের দোয়া আল্লাহ তায়ালার নিকট কবুল হয় না আর এই গুনাহ থেকে বাঁচতেই তওবা এবং ইফতেখার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
 
তওবা এবং ইস্তেগফার পড়লে মুসলিমদের জীবনের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এজন্যই দোয়া করার পূর্বে অবশ্যই তওবা এবং ইস্তেগফার পড়া জরুরী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন তোমরা তোমাদের প্রভুর নিকট ইস্তেগফার ও তওবা করো নিশ্চয়ই তিনি অধিক ক্ষমাশীল  {সূরা নূহ- ১০} আমরা যদি তওবা এবং ইস্তেখার খাস নিয়তে করে করে আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করি তাহলে তিনি অবশ্যই আমাদের দোয়া কবুল করবেন।

দুই হাত তুলে দোয়া করা

দোয়া কবুলের পরীক্ষিত আমলের মধ্যে একটি হল দুই হাত তুলে দোয়া করা দুই হাত তুলে দোয়া করা সুন্নত এবং দোয়া কবুলের একটি বিশেষ আমল দুই হাত তুলে আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা কোন সময় ফিরিয়ে দেন না তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ''তোমাদের রব লজ্জা করেন যখন তার বান্দা তার দিকে দুই হাত তুলে কিছু চায় তখন তিনি তাদেরকে খালি হাতে ফেরত দেন না ''{ তিরমিজি -৩৫৫৬] এজন্যই আমাদেরকে সব সময় দুই হাত তুলে দোয়া করা উচিত তাহলে আল্লাহ তা'আলা নিশ্চয়ই আমাদের দোয়া কবুল করবেন।

রোজা রাখা এবং ইফতারের সময় দোয়া করা

মুসলিমদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাস হল রমজান মাস। রমজান মাসে আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করলে তিনি কখনোই সেই দোয়া ফিরিয়ে দেন না। শুধু রমজান মাসেই না এছাড়াও বিভিন্ন সময় নফল রোজা রেখে আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করলে তাও তিনি ফিরিয়ে দেন। এমনকি রোজা রেখে ইফতারের সময় দোয়া করার একটি বিশেষ সুযোগ।  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন  ''' তাই আমাদের বেশি বেশি রোজা রেখে ইফতারের পূর্বে দোয়া করা উচিতরোজাদারের জন্য দোয়া ওই সময়ই  দোয়া কবুল হয় যখন সে ইফতার করে'' {ইবনে মাজাহ ১৭৫৩}

জুমার দিনে দোয়া করা

দোয়া কবুলের পরীক্ষিত আমলসমূহের মধ্যে একটি হল জুমার দিনে দোয়া করা। জুমার দিন সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।। আর এই দিনটি দোয়া কবুলের একটি বিশেষ দিন। জুমার দিন আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া করলে তা খুব তাড়াতাড়ি কবুল হয়ে যায় ।এই দিনে বিশেষ মুহূর্তে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তা'আলা তা সঙ্গে সঙ্গে কবুল করে নেন।

জুমার দিন জুমার নামাজ পড়ার পর দোয়া করলে আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয়ে যায় এ প্রসঙ্গে রাসুল সালাম বলেন ''জুম্মার দিন এমন এক সময় আছে যখন মুমিন বান্দা আল্লাহ তাআলার নিকট যা চায় তাই কবুল হয়ে যায়''  {সহি বুখারী- ৮৯৩} তাই আমাদের এই বিশেষ দিনটিতে আল্লাহ তাআলার নিকট বেশি বেশি দোয়া করা উচিত।

বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা দোয়া কবুলের

 পরীক্ষিত আমলের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পাঠ করা আগে রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করলে দোয়া খুব তাড়াতাড়ি আল্লাহর নিকট কবুল হয়ে যায় তাই রাসূল সাল্লাহু সাল্লাম বলেন ''তোমরা দুয়া করার আগে উপরে বেশি বেশি দোয়া দরুদ শরীফ পাঠ করো তোমাদের দোয়া কবুল হবে'' {তিরমিজি -৪৮৫}

রাতের শেষ প্রহরে দোয়া করা

দোয়া কবুলের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট একটি প্রিয় মাধ্যম হলো শেষ রাতে দোয়া করা। শেষ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দার সকল দোয়া কবুল করেন। শেষ রাতে আমরা যদি তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার পর তওবা ইস্তেগফার বেশি বেশি করে ঈমান ও  আকিদার সাথে রাসুল সালাম এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ করার পর আল্লাহ তাআলার নিকট খালেস নিয়তে দোয়া করি তাহলে তিনি অবশ্যই আমাদের দোয়া কবুল করবেন।

কেননা আল্লাহ তাআলা রাতের শেষ প্রহরে তার বান্দার দোয়া কবুল করার জন্য আসমানের নিকটবর্তী অবস্থান আসেন ।এ বিষয়ে বুখারী শরীফে উল্লেখ করা আছে'' প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয় অংশে আমার রব নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন কে  আমার নিকট দোয়া করবে আমি তার দোয়া কবুল করবো'' {সহীহ বুখারী-১১৪৫} তাই আমাদের রাতের শেষ প্রহরে বেশি বেশি দোয়া করা উচিত এ সময় দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়ই আমাদের দোয়া কবুল করবেন

উপসংহার

দোয়া আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ দোয়া কবুলের জন্য কিছু আমল উল্লেখ করা হয়েছে যা কুরআন ও হাদিসের আলোকে বর্ণিত আমরা যদি উপরোক্ত আমল গুলো মেনে আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করি তাহলে আল্লাহ তা'আলা নিশ্চয়ই আমাদের দোয়া কবুল করবেন আল্লাহ আমাদের সকলকে তার নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তার কাছে দোয়া করার মত তৌফিক দান করুক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

যমুনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
ttps://https://www.jomunait24.com//p/contact.html